চন্দ্রবোড়া
চন্দ্রবোড়া বা উলু বোড়া ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত একটি অন্যতম বিষধর সাপ। এর বৈজ্ঞানিক নাম: Daboia russelii। এই সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত না হলেও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহর্গামী (Solenoglyphous) বিষদাঁতের জন্য এটি অনেক বেশি ভয়ংকর। এর বিষক্রিয়ায় রক্ত জমা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে অনেক দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে এটিকে বাংলাদেশে মহাবিপন্ন এবং ও বিশ্বে বিপদমুক্ত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
চন্দ্রবোড়ার দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট ও সরু। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত এক মিটার; দেহের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। চন্দ্রবোড়ার মাথা ত্রিকোণাকার, চ্যাপ্টা এবং মাথা ঘাড় থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন মনে হয়। এর গায়ের রঙ হলদে বাদামি। সারা দেহে কালচে রঙের রিঙ থাকে।
প্রাপ্তিস্থান
চন্দ্রবোড়া বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক সাপ। এটি সব বিভাগে সচরাচর এবং ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীনের দক্ষিণাংশ, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, বার্মা ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়।
স্বভাব
চন্দ্রবোড়া নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত পরিবেশে এবং কিছুটা শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। এরা নিশাচর, এরা খাদ্য হিসেবে ইঁদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি ও ব্যাঙ ভক্ষণ করে।
বংশবিস্তার
চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। একটি স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো চন্দ্রবোড়া সাপের ৭৫টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়ার রেকর্ড আছে। সদ্যপ্রসূত বাচ্চা ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। বাচ্চা ২ থেকে ৩ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়।
ব্যবহার
লুপাস অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট নামে গর্ভপাতকারী এক রোগ নির্ধারণের পরীক্ষায় (ডাইলিউট রাসেল ভাইপার ভেনম টাইম টেস্ট) চন্দ্রবোড়ার বিষ ব্যবহৃত হয়।