মাতামুহুরী নদী | Matamuhuri River
মাতামুহুরী নদী বাংলাদেশ ও মায়ানমারের আরাকানের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি নদী। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৭ কিলোমিটার, বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫৪ মিটার। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা পাউবো কর্তৃক মাতামুহুরী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ১৩।
মাতামুহুরী নদী চট্টগ্রাম থেকে আরাকানকে বিভক্তকারী পর্বতমালায় ২১°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ উদ্ভূত একটি নদী। এর উৎসস্থান সাঙ্গু নদীর উৎস থেকে মাত্র ১° উত্তর ও ১° পূর্বে অবস্থিত। মারমা ভাষায় এই নদীটির নাম মামুরি, যার বাংলা সংস্করণ মাতামুহুরী। মাতামুহুরী পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিকে আলীকদম ও লামা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পূর্ব দিক দিয়ে কক্সবাজার জেলায় প্রবেশ করেছে এবং ২১°৪৫´ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১°৫৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে মাতামুহুরীর মোহনায় একটি চওড়া বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে। এটি ভোলাখাল থেকে খুটাখালি পর্যন্ত বিস্তৃত। বদ্বীপটি সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্যধারী এবং জালের মতো ছড়ানো খাঁড়ি আর গরান বনের আচ্ছাদনসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত। মাতামুহুরী নদীর অববাহিকার প্রকল্প হচ্ছে পোল্ডার ৬৪/২-বি, মাতামুহুরী সেচ প্রকল্প। এখানে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সমগ্র এলাকা চাষাবাদের অধীনে আনা হয়েছে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি সংগ্রহের প্রয়োজনে এ নদীর সঙ্গে বেশ কিছু কৃত্রিম খাল সংযুক্ত করা হয়েছে। এই নদী সংলগ্ন প্রধান উপজেলা হচ্ছে চকোরিয়া। নদীটির তীরে চকরিয়া পৌরসভা, লামা পৌরসভা, ঘানাশ্যামবাজার, আলিকদম বাজার ও মানিকপুর বাজার অবস্থিত। নদীটিতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে বাঁতীরে ১৭.৫০ এবং ডানতীরে ৩৩ কিলোমিটার।
বামু খাল, পোপা অথবা বোপা ছড়া, লামা ছড়া, ইয়াংচি খাল এ নদীর অন্যতম উপনদী। বামু খাল লামা উপজেলার সারিয়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা হতে উৎপত্তি লাভ করে লামাবাজারের কাছে মাতামুহুরী নদীতে পতিত হয়েছে। আলীকদম উপজেলার চোখং ইউনিয়নের মানগু হতে লামা ছড়া এবং লামা ইউনিয়নের নাখং হতে পোপা/বোপা ছড়া উৎপত্তি লাভ করে দরদরিতে এসে মিলিত হয়েছে এবং এই যৌথ ধারা মাতামুহুরী নদীতে নিপতিত হয়েছে। নদীটির ভাটির অঞ্চল জোয়ারভাটার প্রভাবে প্রভাবিত।
নদীটির উজান থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা মাটি ও বালুতে তলদেশ ভরাট হয়ে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। প্রভাবশালীরা নদীর তীর দখল করেছে। বনভূমি উজাড় এবং জলধারার পাথর তুলে পাচার করা হচ্ছে। এর ফলে কোথাও কোথাও নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ছে। আবার বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতে বন্যা হচ্ছে এবং শুকনো মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র
১. মানিক, মোহাম্মদ রাজ্জাক, বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি, কথাপ্রকাশ, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৮৯ -২৯০
২. উইকিপিডিয়া
৩. বাংলাপিডিয়া
৪. পানি উন্নয়ন বোর্ড